হারিয়ে যাওয়া নোটবুক রহস্য

— Samik Majumdar

চরিত্রসমূহ:

১. আরাভ – ক্লাসের প্রথম ছাত্র

২. মীনু – আরাভের সেরা বন্ধু এবং স্বঘোষিত গোয়েন্দা

৩. গোলু – খাওয়াদাওয়ায় ব্যস্ত মোটা ছেলে

৪. রিয়া – ফ্যাশন সচেতন মেয়ে

৫. চিন্টু – দুষ্টু মজার ছেলেটি 

৬. সুইটি – সবসময় কান্নাকাটি করে এমন একটি মেয়ে

৭. মন্টি – ছন্দে কথা বলে

৮. প্রিন্সিপাল পাতিল – কঠোর কিন্তু ভুলোমনা

দৃশ্য ১: আতঙ্ক (ক্লাসরুম)

(আরাভ তার ডেস্ক তোলপাড় করছে। মীনু ঢুকছে।)

আরাভ: আমার নোটবুক! ওটা কই! আমার অমূল্য নোটবুক! যেখানে আমার ফর্মুলা ছিল… আর ইলন মাস্কের ছবি আঁকা রকেট!

মীনু: (গোয়েন্দা টুপি পরে, বড় লেন্স বের করে) চিন্তা করো না, গোয়েন্দা মীনু এসে গেছে! এই কেস তো আমি একঘণ্টায় সলভ করে ফেলব!

সুইটি: (কান্না করে) আমারটাও বুঝি হারিয়ে গেছে! ওরে বাবা, আমি কী করে বাঁচব!

মীনু: (ব্যাগ খুলে দেখে) সুইটি, এটা তোমারই তো!

সুইটি: (হঠাৎ খুশি) হায় রে! এবার খুশিতে কাঁদছি! এমন জিনিস তো শুধু সিনেমাতেই দেখি!

গোলু: (লাঞ্চবক্স খুলে একজোড়া মোজা বের করে) আরে! আমি আবার মোজা এনেছি! সামোসা কোথায় গেল? না কি আমি মোজাই খেয়ে ফেলেছি?

সবাই: (হাসে)

মীনু: সবাই শোনো! কেউ একজন আরাভের নোটবুক চুরি করেছে, বা ভুল করে বসে পড়েছে। সত্য উদঘাটিত না হওয়া পর্যন্ত কেউ কোথাও যাবে না।

রিয়া: আমি কিন্তু নোটবুক ছাড়া সেলফি তুলতে পারব না। ব্যাকগ্রাউন্ডে যদি গোলাপি রঙ না থাকে, ফলোয়ার কমে যাবে।

আরাভ: এটা ভয়াবহ! আমি রঙ অনুযায়ী আমার নোট সাজিয়েছিলাম। নীল মানে সংজ্ঞা, সবুজ মানে উদাহরণ, লাল মানে সতর্কতা।

চিন্টু: (হাসে) আমি তো ভাবছিলাম তুমি ট্র্যাফিক লাইট এঁকেছো। কিন্তু লাল দেখে আমি থেমে গেছিলাম।

মীনু: যথেষ্ট হয়েছে। এবার জেরা শুরু।

 ——————————————————————————————————

দৃশ্য ২: জেরা (ক্লাসরুম থেকে খেলার মাঠ)

(মীনু একটা ছোট টেবিল বসায়, সামনে নোট প্যাড। আরাভ পাশে ফাইল ধরে। একে একে সবাই আসে।)

মীনু: গোলু, টিফিনের সময় তুমি কোথায় ছিলে?

গোলু: (মুখভর্তি করে) আমি তো খাচ্ছিলাম… হয়তো নোটবুকটা শুকনো খাবারের মতো ছিল! হঠাৎ একটা পাতলা জিনিস গিলে ফেলেছিলাম…

মীনু: কী কী খেয়েছো?

গোলু: দেখি… দুটো সামোসা, একটা কচুরি, আধখানা পেন্সিল… আর একটা পৃষ্ঠা যেটা খুব সুস্বাদু ছিল!

সবাই: (হাসে)

মীনু: রিয়া, কিছু জানো?

রিয়া: আরে ডার্লিং, আমি তো ভাবছিলাম ওটা ফ্যাশন ম্যাগাজিন! পাতাগুলোর মধ্যে গ্লিটার ছিল! আমি একটু বাতাস নিতে ব্যবহার করছিলাম। কিন্তু আমার ড্রেসের সঙ্গে মেলেনি!

মীনু: আর আরাভের ডেস্কে এত গ্লিটার?

রিয়া: আমি নতুন গ্লিটার গ্লু ট্রাই করছিলাম! লেখার বদলে নকশা করছিলাম! বুঝিনি কেউ গ্লিটার বাদ দিয়ে লেখালেখি নিয়ে এত সিরিয়াস হতে পারে!

মীনু: চিন্টু!

চিন্টু: আমি একটা কাগজের রকেট বানিয়েছিলাম… ওটা আরাভের নোটবুক থেকে নাকি?

আরাভ: কী?! আমার তত্ত্ব রকেট বানিয়ে উড়িয়ে দিলে?

চিন্টু: আরে ভাই রিল্যাক্স! মাত্র একটা পৃষ্ঠা ছিল! আর একটা কাগজের টুপি-ও বানিয়েছিলাম… প্রিন্সিপালের মাথায় পরিয়ে দিলে হাসতেন।

মীনু: বিশ্বাসই হচ্ছে না।

মীনু: মন্টি, এবার তুমি বলো।

মন্টি: (ছন্দে) পাখি ওড়ে, কাগজ ভাসে, বেঞ্চের নিচে শেষ আশ্বাসে। রহস্যে মোড়ানো দুপুরে, কেউ ঘুমিয়েছে ক্লান্তির সুরে।

মীনু: এটা কি ভবিষ্যদ্বাণী না সত্যি কিছু?

মন্টি: ছন্দে লুকানো রহস্য খোলে সময়ে, সঠিক ব্যাখ্যা খুঁজে পাবে ভাবনায়।

সুইটি: (আবার কান্না করে) আমার জন্য হয়েছে নাকি? যদি বসে গুঁতিয়ে ফেলি? আমি তো সবসময় এমন করি!

মীনু: কিছু অদ্ভুত দেখেছো?

সুইটি: চিন্টুকে দেখেছিলাম কিউবের কাছে লুকিয়ে। হাতে নীল কাগজ ছিল।

চিন্টু: মিথ্যে! আমি প্রিন্সিপালের ভয়ে লুকিয়েছিলাম! টাই পরতে ভুলে গিয়েছিলাম। আর ওটা তো আমার হোমওয়ার্ক ছিল।

মীনু: হুম… আরও ক্লু দরকার। এই রহস্য সহজ না!

 ——————————————————————————————————

দৃশ্য ৩: ক্লু অনুসন্ধান (খেলার মাঠ)

(মীনু মাটিতে হেঁটে হেঁটে খুঁজছে, হাতে বড় লেন্স। আরাভ সিরিয়াসভাবে নোট নিচ্ছে।)

মীনু: বাহ! সামোসার প্যাকেট! গোলু!

গোলু: ওটা গত সপ্তাহের! বা হতে পারে আগের মাসের… আমি তো দিনগুলো খাওয়ার হিসেবেই রাখি!

মীনু: গ্লিটার! রিয়া!

রিয়া: শরীরেই গ্লিটার লাগে গো! আমি তো এমনিতেই চকচকে! এইটা তো আমার পারফিউম গ্লিটার!

মীনু: পায়ের ছাপ! ছোট, সরু… কিছু যেন টেনেছে। আর মাটিতে টানার দাগ!

আরাভ: কেউ কি নোটবুকভর্তি ব্যাগ টেনেছে? না হলে এটা সম্ভব নয়!

মীনু: একদম ঠিক! এবার লাগবে ময়দার গুঁড়ো! দাগ স্পষ্ট হবে!

(প্রিন্সিপাল পাতিল প্রবেশ করেন।)

প্রিন্সিপাল পাতিল: এখানে কী চলছে? কে এই কলার খোসা ফেলে গেছে?! আমার নতুন পোলিশড জুতো নষ্ট হল!

(তিনি পিছলে পড়ে যান।)

প্রিন্সিপাল পাতিল: বিশৃঙ্খলা মাটিতেই শুরু। সাথে ব্যথাও!

সবাই: (হাসে)

মীনু: প্রিন্সিপাল স্যার, একটা গুরুত্বপূর্ণ নোটবুক গায়েব হয়ে গেছে। পুরো ক্লাসের স্নায়ু টানটান!

প্রিন্সিপাল পাতিল: এটা তো স্কুল! স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড না! কিন্তু একটা CSI রুম বানাতে বলি নাকি?

মন্টি: (গম্ভীরভাবে) যখন উড়ে যায় রহস্য, ছায়ায় লুকায় সত্য, বেঞ্চের নিচেই ফিনিশ লাইন!

মীনু: আরাভ, কিছু অদ্ভুত মনে পড়ছে?

আরাভ: দুপুরে দেখি চিন্টু নোটবুক দিয়ে জাগলিং করছিল। তারপর সে হঠাৎ গায়েব!

চিন্টু: আমার নতুন সার্কাস স্কিল রে। আমি তো ভাবছিলাম স্কুলে ট্যালেন্ট শো হবে।

মীনু: সবাই ছড়িয়ে পড়ো। বেঞ্চ, ব্যাগ, কোণা সব জায়গা খোঁজো! এবার এই রহস্যের শেষ চাই।

 —————————————————————————————————

দৃশ্য ৪: সন্ধান (বেঞ্চের নিচে)

(মন্টি চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে থাকে।)

মন্টি: নিচে তাকাও, যেখানে ছায়া পড়ে, বেঞ্চের নিচে রহস্য মরে। যেই অন্ধকারে পা পড়ে না, সেখানেই গোপন সব কথারা।

মীনু: ও আবার ছন্দে কথা বলছে না কি এবার সত্যিই হেল্প করলো? মন্টি, তুমি কি আসলে গোয়েন্দা?

মন্টি: আমি কবিতা বলি, ক্লু দিই, কখনো দিইও না, এমনিই ঠকাই।

(সবাই দৌড়ে বেঞ্চের কাছে আসে। আরাভ নিচু হয়ে তার নোটবুক তোলে।)

আরাভ: পাওয়া গেছে! আমার নোটবুক! আমার প্রিয়! আমার সমীকরণ! আমার কবিতা! আমার… ভালোবাসা!

মীনু: কেস ক্লোজড! গোয়েন্দা মীনু আবার সফল! এইবার এক কাপ লেমোনেড প্রাপ্য!

গোলু: কেউ খেতে চাও? এখানে আধটা সামোসাও পেলাম। নোটবুকের পাশে পড়ে ছিল।

রিয়া: ছি! সেটা আমার নয়।

চিন্টু: জানতামই এটা কোথাও আছে… কিন্তু বলিনি কারণ মজা হচ্ছিল! এখন দেখি এক্সট্রা হোমওয়ার্ক হবে না তো?

সুইটি: (আনন্দের কান্না) কত সুন্দর! কত আবেগী! আমি আবার কাঁদবো!

প্রিন্সিপাল পাতিল: পরের বার থিয়েটার ক্লাবেই করো এই নাটক। স্কুলকে করো এক রহস্যময় স্টেজ।

সবাই: (হাসে)

[পর্দা পড়ে]শেষ।

Tags:

Comments are closed